অটিস্টিক শিশুর খাদ্যবিচার

বেশিরভাগ অটিস্টিক শিশুই খেতে ভালোবাসে। অবশ্যই খাবারে বৈচিত্র্য থাকতে হবে। খাবারটা সুন্দর প্যাকেটে মোড়া হতে হবে, শিশুর নতুন স্বাদের খাবারের প্রতি আকর্ষণ থাকাটাই স্বাভাবিক। খাবার যদি নিষিদ্ধ হয়, আকর্ষণ আরো বাড়ে।
অটিস্টিক শিশুর কাছে খাবার শুধু স্বাদের জন্য নয়, বর্ণ, গন্ধ, শব্দ, আকৃতি সব অনুভূতি শিশুদের খাওয়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। অটিস্টিক শিশুর কাছে পটেটো চিপসের স্বাদের থেকে কচ কচ শব্দ আকর্ষণীয় হতে পারে। একটি গুড়ের ডেলার থেকে আকর্ষণীয় মোড়কে মোড়া চকলেট অনেক বেশি লোভনীয় হতে পারে।
ভিড় বাসে কন্ডাক্টর বলেন, পিছন দিকে এগিয়ে চলুন। অটিজমের সঠিক খাবার খুঁজে পেতে গেলে আমাদের ঠিক পিছন দিকে এগোতে হবে।
বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করে বলি। অটিজমের বাড়বাড়ন্তের অন্যতম মূল কারণ খাদ্যদ্রব্যজাত টক্সিন। এই টক্সিন সরল ভারীমৌলের আকারে শিশুর রক্তে শোষিত হয়। রক্তে শোষিত টক্সিনের কিছু অংশ সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড মিশে যাওয়ার কারণেই প্রয়োজনীয় নিউরোনগুলি অকেজো হয়ে পড়ে। যাকে আপনি অটিজম বলে জানছেন, ফল্গুধারার মতো আপনার শিশুর মানসিক প্রতিবন্ধকতা বেড়ে যাচ্ছে।
মুক্ত অর্থনীতি পূর্ববর্তী যুগের কথা মনে করুন। বাবারা বাজারে গিয়ে ওজন করে নুন, হলুদ, আটা ইত্যাদি আনতেন। দুদিকে ঝোলা দাড়িপাল্লায় প্রয়োজনীয় মশলাপাতি দোকানদার ওজন করে দিতেন। কিন্তু আজ নুন, হলুদ, আটা, ডাল, চিনি, পাঁচফোড়ন, জিরে যাই কিনতে যান না কেন, সবই প্লাস্টিকের প্যাকেটে আগে থেকেই তৈরি থাকছে। কবে প্যাকেজিং করা হয়েছে লেখা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। সেই লেখা সত্যি হতে পারে, নাও হতে পারে। যা যা মিশানো হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা সেই সেই পরিমাণে মিশানো হয়েছে কিনা কে জানে? অর্থাৎ আপনাকে মার্চ মাসে প্যাকিং করা জিনিস সেপ্টেম্বরে কিনতে হচ্ছে। একটা এক্সপায়ারি ডেট অবশ্যই লেখা থাকে। আমরা টেকনোলজিস্টরা একে বলি সেলফ লাইফ। অর্থাৎ জিনিসটাকে প্যাকিং এর দিন থেকে কনজাম্পশন এর দিন অবধি টিকিয়ে রাখা। ফুড প্রোডাক্ট এ যত সেলফ লাইফ বাড়বে ততই মুনাফা। কারণ খাবার সব সময় নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। টাটকা টাটকা অনুভূতিটা নষ্ট হয়ে যায়। একটা বাসি গন্ধ এসে যায়।
খাবারের টিকে থাকার দিনটি বাড়ানোর জন্য অনেক কিছু বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশাতে হয়। এছাড়া স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ, টেক্সচার এইসবগুলি আরো ভালো করবার জন্য নিষিদ্ধ রং, স্বাদ, গন্ধ মিশাতে হয়। আইন বাঁচানোর জন্য পার্মিসিবল লিমিট অবশ্যই আছে। কিন্তু অটিস্টিক বাচ্চাদের পাকস্থলী সেই লিমিট টপকে টক্সিন খুঁজে নেয়।
বুঝতে পারি না প্রতিদিন নতুন নতুন নামকরণ করে টুথপেস্ট বাজারে আসে। আরো মাত্রাছাড়া বিষ রাসায়নিক দ্রব্যের আকারে রক্তে মিশে যায়।
এছাড়া আছে রান্না করবার সামগ্রী। আগে এত প্লাস্টিকের ব্যবহার, টেফ্লন এর ব্যবহার ছিল না। মাইক্রোওভেনে গরম করার থেকে, লোহার কড়াইয়ে গরম করার নিয়ম ছিল। রেফ্রিজারেটর এর ব্যবহার এত অনাবশ্যক ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়নি।
অটিস্টিক বাচ্চার বাবা মায়ের বাচ্চার খাবার পছন্দ করার সময় যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক ও টাটকা খাদ্যদ্রব্য পছন্দ করতে হবে। আকর্ষণীয় প্যাকেজিং এ মোড়া খাবার দাবার লোভনীয় হতে পারে, কিন্তু অটিস্টিক বাচ্চার কাছে এটা বিষ।
বাজার করবার সময় যেভাবে কুইন্টাল চিনির বস্তা থেকে বেলচা মতন জিনিসে করে ১ কেজি চিনি ওজন করে দিত, ছোট হাতা করে কাগজের ঠোঙায় পোস্ত ঢেলে ঢেলে ওজন করে দিত, দোকান করবার সেই দিনগুলিতে আমাদের ফিরে যেতে হবে। চাল, ডাল, তেল, মশলা, বিস্কুট হাত বাড়ালেই আজ ডিপার্টমেন্টাল শপে পাওয়া যায়। কিন্তু খাবারকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য, খাবারের জীবিত থাকার দিনগুলি আরো বাড়াবার জন্য, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর নামে ভারীমৌল সমৃদ্ধ রাসায়নিক মিশিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার ইঁদুর দৌড়ের জন্য হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোম্পানিগুলির মাত্রাছাড়া স্টেবিলাইজার, এডিবিল কালার, ফ্লেভারের ব্যবহার আপনার অটিস্টিক শিশুদের জন্য ভালো হচ্ছে না।
বড় মুদির দোকান থেকে ওজন করে আনা মুড়ি, চিরে, সুজি, গুড় ইত্যাদি, ডিপার্টমেন্টাল শপ থেকে কেনা পাস্তা, নুডুলস, কর্নফ্লেক্স থেকে অনেক বেশি নিরাপদ প্রাতঃরাশ।

সবশেষে বলি আমাদেরও বয়স হচ্ছে, আজকের দিনের মতো আগে এত ক্যান্সার, আলজাইমার হতো না।

Comments

Popular posts from this blog

Tab based education to the autistics

Developing preliminary speech of Autism

Over involvement with Autism