অটিজিম কি বড় হলে সেরে যায়?
অটিজিম তো কোনো রোগই নয়, এটা একটা মানুষের অবস্থা, মনের অবস্থা, কিছু শর্ত। এই শর্তগুলো অনেকটাই সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। যার ফলে সারানোর প্রশ্ন আসে। আমরা যেটা সমাজে নিতে পারি না সেইটাই একটা অটিজম শিশুকে বোঝানো হয়। শিশুকে সমাজের মতন করে নেওয়া হয়।
এখন কথা হল যে, সমাজ শিশুর মতো হবে না, শিশু সমাজের মত হবে।
সত্যি কথা যে দুটোই প্রয়োজন। শিশুকে সমাজে মত করে নেওয়ার জন্য আজ কত রকমের থেরাপি। অকুপেশন থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, সেনসরি থেরাপি, বিহেভিয়ার থেরাপি। কি না, বাচ্চা ঠিকমত কথা বলবে, ঠিক মত আচরন করবে, কোনরকম হাইপার অ্যাকটিভিটি দেখাবে না, পাঁচজনের সঙ্গে মিশতে পারবে, সমাজে, অনুষ্ঠান বাড়িতে যে রকম ভাবে চলতে হয়, সেভাবে চলবে।
সত্যি অটিজম বাচ্চার বাবা মা, একজন অটিস্টিক বাচ্চা এই নিয়ে অনেক লড়াই করে।
উল্টো দিক থেকে সমাজকেও অটিজম অবস্থাটির সঙ্গে নিজেকে অভিযোজিত করতে হবে।
অটিস্টিক মানুষের চাহিদা গুলো খুব একটা অপ্রাসঙ্গিক, বাঁধন-ছেঁড়া নয়। নিয়ম মাফিক জীবন, সময়ানুবর্তিতা, শব্দ, আলো, গন্ধ ইত্যাদির অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বন্ধ হওয়া, ব্যতিক্রমী চালাকি বন্ধ হওয়া - কোনটাই ভুল নয়।
সমাজের ও থেরাপি প্রয়োজন।
দায়িত্বটা কেবলমাত্র মা বাবার নয়, যাদের বাড়িতে এরকম বাচ্চা অটিস্টিক ডায়াগনোসিস হয়েছে। এখনো সময় আছে। সমাজ যদি অটিস্টিক মানুষ ও পরিবার গুলোর জন্য নিজেকে অভিযোজিত না করে তবে শিশুদের একটা বড় অংশ মূলসমাজ থেকে দূরে চলে যাবে। এই অংশটা দিনকে দিন কলেবরে বৃদ্ধি পাবে।
অনেক নতুন শনাক্ত অটিস্টিক পরিবারকে দেখেছি যারা যেনতেনপ্রকারেন অটিজমকে সারাতে চান। আর ঠিক এরই সুযোগ নেয়, কিছু অসাধু ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির মানুষ।
একটা কথা বুঝতে হবে, থেরাপির মাধ্যমে কিছু উন্নতি তো হয়ই, তবে সেটা সম্পূর্ণভাবে অটিজিমকে নির্মূল করতে পারে না। ভেবে দেখুন কোন মানুষের অটিজম বিশেষত্ব না থাকে, তবে আমরা একটা সুন্দর মানুষকে হারাবো।
একটি অটিজম শিশুর কাছে সমাজের প্রথম এবং প্রধান অংশ তার বাবা-মা। সেই বাবা-মায়ের যদি এই অটিজম কে মেনে না নেয় তবে আরো পাঁচটা মানুষ মানবে কি করে? সমাজের অভিযোজন এর যে কথাটা বলছিলাম, সেই ব্যাপারটা তো গোড়াতেই ধাক্কা খাবে।
অতএব আপনি বুঝুন এবং অন্যকে বুঝতে সাহায্য করুন।
অটিজম মানুষের মত সুন্দর মানুষ আর হয় না। এই উপলব্ধি যেদিন আপনার আসবে অটিজম কে আর সমস্যা মনে হবে না।
অটিজম সেরে যাবে।
Comments
Post a Comment