ভালোলাগার ভিলাই ভ্রমণ
আমরা ক পেয়েছি। কল্যাণী লাইফ ইনস্টিটিউট ভারতের শ্রেষ্ঠ পিতামাতার পরিচালিত সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ পূর্ণমন্ত্রী ডক্টর থহরচাঁদ ঘেলোট মহাশয় আমাকে ভিলাই শহরে পরিবার ইন্ডিয়ার পরিচালিত ন্যাশনাল প্যারেন্ট মিটে পুরস্কৃত করবেন। এইজন্যই ভালোলাগার ভিলাই ভ্রমণ।
শরীরের ক্ষমতা এবং কাজের চাপ দিনে দিনে ব্যস্তানুপাতিক হয়ে যাওয়ায় স্থির করলাম ঝটিকা সফর করবো। সকাল 5:35 এর ফ্লাইটে রায়পুর গিয়ে সেখান থেকে ভিলাই আবার একই ভাবে ফিরে আসা দিনের দিনে। কল্যাণীর গাড়ি চালকের নিজের ছেলেও অটিস্টিক। হিসাব মতো সেও অভিভাবক। তাই সময়ের কোনো ভুলচুক হলো না। ইন্ডিগো বিমান অযথা আধঘন্টা দেরী করলো। দেরি করতেই পারে। পরিষেবিতর চেয়ে পরিষেবকের সময়ের মূল্য বেশি।
সকালের একটা গন্ধ থাকে। কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা, বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। ভাবি হয়তো যাত্রা খুব কষ্টকর হবে, কিন্তু সকালের পরিবেশটাই মন ভালো করে দেয়। একটু পয়সা বেশি দিয়ে জানলার ধারে একটা সিট নিয়েছিলাম সূর্যোদয় দেখবো বলে। কুয়াশায় ঢাকা আকাশে সূর্যের আলো ভালো করে দেখা গেল না। চোখ ঢুলে ঢুলে আসছিল। তীব্র নীল বিমান সুন্দরীরা ডেমো পজিশন নিতেই শুরু হয়ে গেল সেই একঘেয়ামি বকবক। বুঝতে পারি না, যে রাস্তা দিয়ে যাব সেখানে জলে ডোবার প্রশ্ন আসে কি করে? তবুও জলে ডোবার সময় কি করতে হবে সেটা জানতেই হবে। অত্যন্ত বিপদজনক ডেমো। সাত সকালে সিক্স ই ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপন বড় বেমানান। দিনের বয়স একটু না বাড়লে প্রফেশনালিজম ভালো লাগেনা। জীবিকা তাড়া করে বেড়ালে জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
অগত্যা কানে হেড ফোন লাগিয়ে চোখ বুজলাম। আমার ইন্দ্রিয় কৃত্রিম বানানো সংবেদন সহ্য করতে পারে না।
রাইপুরের মাটির কাছাকাছি দাবা খেলার ছক। বেমানান দ্বীপের মত বসতিগুলোকে না দেখলে, পুরোটাই রিয়াল এস্টেটের স্বর্গ রাজ্য। কিন্তু জনঘনত্ব না থাকলে তো উন্নয়নের জোয়ার আসে না। নতুন জায়গা, ওলা ভরসা। ক্যাব ড্রাইভার আমাকে উঠিয়েই ওটিপি নেবার বদলে আমার মোবাইল নিয়ে ট্রিপ বাতিল করে আদেশ দিলো, "ষোলোশো হয় আপনি পনেরোশো দেবেন।" হালকা শীতের মনোরম সকালে ঝগড়া করতে ইচ্ছা করে না। ছেড়ে দিয়ে মানিয়ে নিতে মন চায়।
সামাজিক বনসৃজনের আধ গজানো গাছগুলো কুয়াশায় কুঁকড়ে আছে। বন্ধ চায়ের দোকানের দরজায় ছত্তিসগড়ের নেড়ি বাচ্চা কোলে শুয়ে আছে। এক-সওয়ারির নম্বর প্লেট ঝুলে পড়া ইন্ডিকা দূর আকাশের জেট বিমানের মত সূক্ষ্ম ধোঁয়ার রেখার পিছনে রেখে এগিয়ে চললো। দেহাতি ভাষায় চালকের ফোনালাপ, রাস্তার দুপাশে পিছনে ছুটে চলা হিন্দী ভাষায় অজস্র সাইনবোর্ড। চক্ষু কর্ন অবসন্ন করেও, বাকি ছিল ত্বক ও ঘ্রানেন্দ্রিয়।
চায়ের ধাবার পাশের মন্দির আমাকে একটা চিট চিট টিপ পরিয়ে গাড়িতে পোড়া পোড়া ধুপ জ্বালিয়ে দিল। হাইপার হবার মতো অনেক সেন্সরি ওভারলোড ছিল, হলামও। টিপ মুছে, ধুপ নিবিয়ে, ড্রাইভারকে ধমক দিয়ে কিছুটা সামলে নিলাম। চমকে ওঠা চালক আমাকে অটিস্টিক অ্যাডাল্ট ভাবলো কিনা কে জানে? ভিলাই শহরটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা। প্রচুর গাছ, এমনি এমনি হয়েছে, লাগানোও হয়েছে। মানুষজন কম বলেই মনে হলো, ভাগ্যিস গুগল ম্যাপ আমায় একলা ছেড়ে যায় নি। নতুন জায়গায় কেমন যেন অজানা ভয় হয় আজকাল। মনে হয় সবাই যেন আমার ক্ষতি করার জন্যে তৈরি হয়ে আছে। রাস্তার দু'ধারের বড় বড় বিজ্ঞাপনগুলো জানিয়ে দেয় নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়েছে। বাকি সব একই রয়েছে। অনাবশ্যক ফ্লেক্সগুলো দৃশ্য দূষণ বাড়ায়। রাজনীতি কাজ করবার জায়গা, কিন্তু প্রদর্শনটাই বেশি হয়ে যায়।
স্নেহ সম্পদ বিদ্যালয়ের বড় দরজাটি সামনে ইউক্যালিপ্টাসের ঝাড় সার হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নুড়ি পাথর বিছানো রাস্তা এঁকেবেঁকে ঢুকে গিয়েছে। প্রায় তিন একর জায়গায় ছোট ছোট সার সার বাড়ি। এখানে প্রাপ্তবয়স্ক মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষেরা থাকেন। অনেকটা আমাদের প্রাচীন কল্যাণীর সরকারি কোয়ার্টারগুলোর মতো। দেখেই কেমন ভালো লাগা এসে যায়। মাঝবয়সী একজন প্রতিবন্ধী মানুষ আমায় খুব আনন্দের সঙ্গে সব দেখাতে চাইলো। ওর হাসি আর উৎসাহতে বিশাল বড় প্রাপ্তির সুর।
সেখান থেকে বেরিয়ে শেষমেষ পৌঁছালাম সঠিক জায়গায়, জৈন ভবন, ভীলাই। অনেক সম্মান, প্রশংসা সবই অপেক্ষা করছিল। সমগ্র ভারতের পিতা-মাতা পরিচালিত সংস্থার মধ্যে প্রথম স্থান। চাপ একটু থেকেই যায়। একে তো সর্বভারতীয় পরিবার সংস্থাটির নতুন সদস্য আমরা। তার ওপর অনেক কোঁচকানো ভুরু। প্রশংসাকারী থাকলে নিন্দুকও থাকবেন।
প্রশংসাকারীরা জানালেন প্রেমলতা পেশোয়ারি শ্রেষ্ঠ অভিভাবক পরিচালিত সংস্থার পুরস্কারে আমাদের প্রতিবেদন প্রফেশনাল ম্যানেজমেন্ট প্রতিবেদন সুলভ হয়েছে। এইরকম উপস্থাপনার পর কোন সুপারিশ লাগে না।
নিজেকে ভীষন ভারশূন্য লাগছিল। প্রতিটি পা ফেলা, চলা, কথা বলায় আনাড়ি নায়কের অনুভূতি। এটুকু বুঝেছিলাম, হ্যান্ডশেক করতে গেলে ওপারে থাকা মানুষটার হাতে নিজেই হাত রাখতে হয়। সব সময় যা ভাবা যায় তাইতো আর হয় না। মন্ত্রী সাহেব আসতে পারলেন না। চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তার স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে তাকে অনুষ্ঠানসূচি বাতিল করতে হয়। একটু খুঁত থেকে গেল, আমার বড়চর্চায় ব্যাঘাত ঘটলো। আসার পথে সঙ্গী পাওয়া গেল। কথা বলার লোক থাকলে সময় চটপট কেটে যায়।
ইস্পাতের দেশের বিকালের আকাশ আরো চকচকে লাগে। রোদ অস্ত যেতেই ঠান্ডা তাড়া করে ঢুকে যায়। ইউক্যালিপটাস গাছগুলির শোবার সময় হয়ে গেছে। রাস্তার ধারের ফার্মের মহিষগুলো দিনের আলো থাকতে থাকতে কাজ সেরে নিতে চাইছে। সকালের বন্ধ চায়ের দোকানের সামনে লোকে লোকারণ্য। মন্দিরের পুরোহিত সকালের মতো চটচটে টিপ নিয়ে তাড়া করে। একনাগাড়ে মন্দিরের ঠাকুরের গানেও হিন্দি সুরের আভাস। ভক্তি কেমন যেন লোক দেখানো। সকালের ড্রাইভার এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিতে দেরি করেনি।
বিমানবন্দরের গর্ভে ধূমপান কক্ষের প্রতি আমার একটু আসক্তি রয়েছে। ভারতের সাতটি বিমানবন্দরের ধূমপান কক্ষের সঙ্গে পরিচিত। রায়পুর বিমানবন্দরেও একইভাবে পরিচিত হতে চাইলাম। অস্তপ্রৌঢ়ের কাগজে জড়ানো সযত্ন সিগারেটে সুখটান ঠিক যেন সদ্য কিশোরের আস্বাদ। রাত্রের আকাশে অর্ধেকটা চাঁদের আলো বিমানের ঠিক পাখার ডগায় এসে পড়ে। ঝিকঝিক করে। ক্রাফট এর ভিতর তীব্র আলো, যান্ত্রিক শব্দ সব ছারখার করে দেয়। তার সঙ্গে অসহ্য নীল সুন্দরীর নৃত্য। ভালোলাগার ভিলাই ভ্রমণের রচনায় মন দিলাম। কাল থেকে আবার জীবনের গতানুগতিক খোপে ঢুকতে হবে।
কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ পূর্ণমন্ত্রী ডক্টর থহরচাঁদ ঘেলোট মহাশয় আমাকে ভিলাই শহরে পরিবার ইন্ডিয়ার পরিচালিত ন্যাশনাল প্যারেন্ট মিটে পুরস্কৃত করবেন। এইজন্যই ভালোলাগার ভিলাই ভ্রমণ।
শরীরের ক্ষমতা এবং কাজের চাপ দিনে দিনে ব্যস্তানুপাতিক হয়ে যাওয়ায় স্থির করলাম ঝটিকা সফর করবো। সকাল 5:35 এর ফ্লাইটে রায়পুর গিয়ে সেখান থেকে ভিলাই আবার একই ভাবে ফিরে আসা দিনের দিনে। কল্যাণীর গাড়ি চালকের নিজের ছেলেও অটিস্টিক। হিসাব মতো সেও অভিভাবক। তাই সময়ের কোনো ভুলচুক হলো না। ইন্ডিগো বিমান অযথা আধঘন্টা দেরী করলো। দেরি করতেই পারে। পরিষেবিতর চেয়ে পরিষেবকের সময়ের মূল্য বেশি।
সকালের একটা গন্ধ থাকে। কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা, বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। ভাবি হয়তো যাত্রা খুব কষ্টকর হবে, কিন্তু সকালের পরিবেশটাই মন ভালো করে দেয়। একটু পয়সা বেশি দিয়ে জানলার ধারে একটা সিট নিয়েছিলাম সূর্যোদয় দেখবো বলে। কুয়াশায় ঢাকা আকাশে সূর্যের আলো ভালো করে দেখা গেল না। চোখ ঢুলে ঢুলে আসছিল। তীব্র নীল বিমান সুন্দরীরা ডেমো পজিশন নিতেই শুরু হয়ে গেল সেই একঘেয়ামি বকবক। বুঝতে পারি না, যে রাস্তা দিয়ে যাব সেখানে জলে ডোবার প্রশ্ন আসে কি করে? তবুও জলে ডোবার সময় কি করতে হবে সেটা জানতেই হবে। অত্যন্ত বিপদজনক ডেমো। সাত সকালে সিক্স ই ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপন বড় বেমানান। দিনের বয়স একটু না বাড়লে প্রফেশনালিজম ভালো লাগেনা। জীবিকা তাড়া করে বেড়ালে জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
অগত্যা কানে হেড ফোন লাগিয়ে চোখ বুজলাম। আমার ইন্দ্রিয় কৃত্রিম বানানো সংবেদন সহ্য করতে পারে না।
রাইপুরের মাটির কাছাকাছি দাবা খেলার ছক। বেমানান দ্বীপের মত বসতিগুলোকে না দেখলে, পুরোটাই রিয়াল এস্টেটের স্বর্গ রাজ্য। কিন্তু জনঘনত্ব না থাকলে তো উন্নয়নের জোয়ার আসে না। নতুন জায়গা, ওলা ভরসা। ক্যাব ড্রাইভার আমাকে উঠিয়েই ওটিপি নেবার বদলে আমার মোবাইল নিয়ে ট্রিপ বাতিল করে আদেশ দিলো, "ষোলোশো হয় আপনি পনেরোশো দেবেন।" হালকা শীতের মনোরম সকালে ঝগড়া করতে ইচ্ছা করে না। ছেড়ে দিয়ে মানিয়ে নিতে মন চায়।
সামাজিক বনসৃজনের আধ গজানো গাছগুলো কুয়াশায় কুঁকড়ে আছে। বন্ধ চায়ের দোকানের দরজায় ছত্তিসগড়ের নেড়ি বাচ্চা কোলে শুয়ে আছে। এক-সওয়ারির নম্বর প্লেট ঝুলে পড়া ইন্ডিকা দূর আকাশের জেট বিমানের মত সূক্ষ্ম ধোঁয়ার রেখার পিছনে রেখে এগিয়ে চললো। দেহাতি ভাষায় চালকের ফোনালাপ, রাস্তার দুপাশে পিছনে ছুটে চলা হিন্দী ভাষায় অজস্র সাইনবোর্ড। চক্ষু কর্ন অবসন্ন করেও, বাকি ছিল ত্বক ও ঘ্রানেন্দ্রিয়।
চায়ের ধাবার পাশের মন্দির আমাকে একটা চিট চিট টিপ পরিয়ে গাড়িতে পোড়া পোড়া ধুপ জ্বালিয়ে দিল। হাইপার হবার মতো অনেক সেন্সরি ওভারলোড ছিল, হলামও। টিপ মুছে, ধুপ নিবিয়ে, ড্রাইভারকে ধমক দিয়ে কিছুটা সামলে নিলাম। চমকে ওঠা চালক আমাকে অটিস্টিক অ্যাডাল্ট ভাবলো কিনা কে জানে? ভিলাই শহরটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা। প্রচুর গাছ, এমনি এমনি হয়েছে, লাগানোও হয়েছে। মানুষজন কম বলেই মনে হলো, ভাগ্যিস গুগল ম্যাপ আমায় একলা ছেড়ে যায় নি। নতুন জায়গায় কেমন যেন অজানা ভয় হয় আজকাল। মনে হয় সবাই যেন আমার ক্ষতি করার জন্যে তৈরি হয়ে আছে। রাস্তার দু'ধারের বড় বড় বিজ্ঞাপনগুলো জানিয়ে দেয় নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়েছে। বাকি সব একই রয়েছে। অনাবশ্যক ফ্লেক্সগুলো দৃশ্য দূষণ বাড়ায়। রাজনীতি কাজ করবার জায়গা, কিন্তু প্রদর্শনটাই বেশি হয়ে যায়।
স্নেহ সম্পদ বিদ্যালয়ের বড় দরজাটি সামনে ইউক্যালিপ্টাসের ঝাড় সার হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নুড়ি পাথর বিছানো রাস্তা এঁকেবেঁকে ঢুকে গিয়েছে। প্রায় তিন একর জায়গায় ছোট ছোট সার সার বাড়ি। এখানে প্রাপ্তবয়স্ক মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষেরা থাকেন। অনেকটা আমাদের প্রাচীন কল্যাণীর সরকারি কোয়ার্টারগুলোর মতো। দেখেই কেমন ভালো লাগা এসে যায়। মাঝবয়সী একজন প্রতিবন্ধী মানুষ আমায় খুব আনন্দের সঙ্গে সব দেখাতে চাইলো। ওর হাসি আর উৎসাহতে বিশাল বড় প্রাপ্তির সুর।
সেখান থেকে বেরিয়ে শেষমেষ পৌঁছালাম সঠিক জায়গায়, জৈন ভবন, ভীলাই। অনেক সম্মান, প্রশংসা সবই অপেক্ষা করছিল। সমগ্র ভারতের পিতা-মাতা পরিচালিত সংস্থার মধ্যে প্রথম স্থান। চাপ একটু থেকেই যায়। একে তো সর্বভারতীয় পরিবার সংস্থাটির নতুন সদস্য আমরা। তার ওপর অনেক কোঁচকানো ভুরু। প্রশংসাকারী থাকলে নিন্দুকও থাকবেন।
প্রশংসাকারীরা জানালেন প্রেমলতা পেশোয়ারি শ্রেষ্ঠ অভিভাবক পরিচালিত সংস্থার পুরস্কারে আমাদের প্রতিবেদন প্রফেশনাল ম্যানেজমেন্ট প্রতিবেদন সুলভ হয়েছে। এইরকম উপস্থাপনার পর কোন সুপারিশ লাগে না।
নিজেকে ভীষন ভারশূন্য লাগছিল। প্রতিটি পা ফেলা, চলা, কথা বলায় আনাড়ি নায়কের অনুভূতি। এটুকু বুঝেছিলাম, হ্যান্ডশেক করতে গেলে ওপারে থাকা মানুষটার হাতে নিজেই হাত রাখতে হয়। সব সময় যা ভাবা যায় তাইতো আর হয় না। মন্ত্রী সাহেব আসতে পারলেন না। চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তার স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে তাকে অনুষ্ঠানসূচি বাতিল করতে হয়। একটু খুঁত থেকে গেল, আমার বড়চর্চায় ব্যাঘাত ঘটলো। আসার পথে সঙ্গী পাওয়া গেল। কথা বলার লোক থাকলে সময় চটপট কেটে যায়।
ইস্পাতের দেশের বিকালের আকাশ আরো চকচকে লাগে। রোদ অস্ত যেতেই ঠান্ডা তাড়া করে ঢুকে যায়। ইউক্যালিপটাস গাছগুলির শোবার সময় হয়ে গেছে। রাস্তার ধারের ফার্মের মহিষগুলো দিনের আলো থাকতে থাকতে কাজ সেরে নিতে চাইছে। সকালের বন্ধ চায়ের দোকানের সামনে লোকে লোকারণ্য। মন্দিরের পুরোহিত সকালের মতো চটচটে টিপ নিয়ে তাড়া করে। একনাগাড়ে মন্দিরের ঠাকুরের গানেও হিন্দি সুরের আভাস। ভক্তি কেমন যেন লোক দেখানো। সকালের ড্রাইভার এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিতে দেরি করেনি।
বিমানবন্দরের গর্ভে ধূমপান কক্ষের প্রতি আমার একটু আসক্তি রয়েছে। ভারতের সাতটি বিমানবন্দরের ধূমপান কক্ষের সঙ্গে পরিচিত। রায়পুর বিমানবন্দরেও একইভাবে পরিচিত হতে চাইলাম। অস্তপ্রৌঢ়ের কাগজে জড়ানো সযত্ন সিগারেটে সুখটান ঠিক যেন সদ্য কিশোরের আস্বাদ। রাত্রের আকাশে অর্ধেকটা চাঁদের আলো বিমানের ঠিক পাখার ডগায় এসে পড়ে। ঝিকঝিক করে। ক্রাফট এর ভিতর তীব্র আলো, যান্ত্রিক শব্দ সব ছারখার করে দেয়। তার সঙ্গে অসহ্য নীল সুন্দরীর নৃত্য। ভালোলাগার ভিলাই ভ্রমণের রচনায় মন দিলাম। কাল থেকে আবার জীবনের গতানুগতিক খোপে ঢুকতে হবে।
Comments
Post a Comment