(#2) অটিজম সম্বন্ধে কিছু প্রাথমিক ধারনা

কোন শিশুর মধ্যে অটিজিম্ আত্মমগ্নতার বিশেষত্ব দেখা গেলে পিতা-মাতা প্রাথমিকভাবে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্বন্ধে সুসংগঠিত ধারণা পান না। অটিজম যে একটি জীবনব্যাপী বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণ, এই সত্য কথাটা একজন সবে জানা বাবা-মা'র কাছে গ্রহণ করাটা বেশ কঠিন। বয়জ্যেষ্ঠরা কনিষ্ঠের মন ভাঙাতে চান না, সুযোগসন্ধানীরা আয়ের উৎসকে কমাতে চান না, যদি কোন প্রাচীন অটিস্টিক পরিবার সত্যটি বলেন তবে তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। ভাবা হয় যে তোমরা পারোনি বলে আমরাও কি পারবো না।
তর্ক বিতর্ক চলতে থাকুক, কিন্তু সকলকেই অটিজমের সত্যটা বুঝতে হবে। পৃথিবীতে বহু পরিবার এবং অটিজম মানুষ তাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে খুবই আনন্দে আছে। যারা উপলব্ধি করেছেন তাদেরই কষ্টটা কমেছে। অটিজম সাধারণত দুই বছর থেকে আট বছরের মধ্যে বুঝতে পারা যায়। অটিজম নির্ধারিত হবার পরই কতগুলি বিষয় মনে রাখতে হবে। যথাসম্ভব নিম্নলিখিত কাজকর্মগুলি থেরাপি, স্পেশাল এডুকেশনের পাশাপাশি বছর খানেকের মধ্যে শেষ করতে হবে।
১) যতটা সম্ভব অটিজম সম্বন্ধে অল্প সময়ের মধ্যে বুঝে নিতে হবে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ওয়েবসাইট, আলোচনা চক্র, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক গ্রুপ থেকে অটিজম সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি জেনে নিতে হবে। অনেক সংস্থায় প্যারেন্ট ট্রেনিং করানো হয়, যেটা অটিজম জগতে প্রবেশের প্রথম ও প্রধান সিঁড়ি।
২) শিশুর আধার কার্ডটি যত শীঘ্র সম্ভব করে নিতে হবে। বিভিন্ন ব্যাংক এবং পোস্ট অফিসে গিয়ে আধার কার্ডের বিষয়ে যোগাযোগ করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হিসাবে স্থানীয় রেসিডেনশিয়াল শংসাপত্র, পিতা বা মাতার আধার কার্ড, ছবি এবং জন্ম শংসাপত্র সঙ্গে নিতে হবে। আধার কার্ডে নাম বা ঠিকানা ভুল যেন না থাকে।
৩) আধার কার্ডটি হাতে পাওয়ার পরে ব্যাংকে যেতে হবে। পিতা বা মাতা যে কারোর সঙ্গে শিশুর একটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে, যেখানে এই আধার কার্ড প্রয়োজন হবে।
৪) ডিজেবিলিটি সার্টিফিকেট করাটা এর পরের স্তর। আপনার বাড়ির সামনে সবচেয়ে বড় যে হাসপাতাল রয়েছে সেখানে শিশুকে নিয়ে গিয়ে আউটডোরে টিকিট করিয়ে সাইক্রিয়াট্রিস্ট এর ঘরে শিশুকে দেখাতে হবে। যদি তিনি মনে করেন যে শিশুর সাইকোলজিকাল রিপোর্টের জন্য সাইকোমেট্রি করাতে হবে তিনি সাইকোলজিস্টকে হাসপাতালে টিকিটটাতেই রেফার করতে পারেন। এর পরের কাজ সাইকোলজিস্ট এর কাছ থেকে সাইকোমেট্রির তারিখ নেওয়া। যেদিন সাইকোমেট্রি থাকবে সেদিন আবার শিশুকে নিয়ে সাইকোলজিস্ট এর কাছে উপস্থিত হয়ে রিপোর্ট সম্পূর্ণ করতে হবে। প্রশাসনিক দপ্তরে গিয়ে একটি নির্দিষ্ট ফর্ম ভর্তি করে বাচ্চার দুই কপি ফটো, আধার কার্ড, রেসিডেন্সিয়াল শংসাপত্র, জন্ম শংসাপত্রসহ জমা করতে হবে। জমা করার সময় অবশ্যই হাসপাতালের মূল টিকিটটি এবং সাইকোলজিস্ট এর মূল রিপোর্ট জমা করতে হবে। নির্দিষ্ট একটি তারিখে সব আবেদনকারীকেই হাসপাতাল আসতে বলা হয়। ঐদিন শিশুকে নিয়ে গিয়ে সার্টিফিকেট এর কাজ সম্পূর্ণ করে আসতে হবে।
৫) যদি নিরাময় প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করতে চান, তবে ন্যাশনাল ট্রাস্ট এর স্বীকৃত সংস্থার নিকট বাচ্চার জন্মের শংসাপত্র, আধার কার্ড, ব্যাংকের পাস বই, পিতা বা মাতার আয়ের শংসাপত্র ও এক কপি ছবি সহ আবেদন করতে পারেন। বিপিএল পরিবার পিছু আড়াইশো টাকা এবং এর পরিবার পিছু পাঁচশো টাকা আবেদনের জন্য নেওয়া হয়।
নিরাময় প্রকল্পে প্রতিবছর থেরাপি বাবদ দশ হাজার টাকা, অন্যান্য চিকিৎসা বাবদ আটহাজার টাকা, এছাড়া সর্বমোট OPD চিকিৎসা বাবদ ত্রিশ হাজার টাকার কাছাকাছি পাওয়া যায়।
৬) এছাড়া বিপিএল পরিবার পিছু বিশেষ শিশুদের জন্য মানবিক পেনশন স্কিম এর ব্যবস্থা আছে। যদি আপনার এক লক্ষ টাকার নিচে আয়ের শংসাপত্র থাকে, তবে জন্ম শংসাপত্র, প্রতিবন্ধী শংসাপত্র, আয়ের শংসাপত্র এবং রেসিডেনশিয়াল শংসাপত্র সহ নির্দিষ্ট ফর্মে দরখাস্ত করে স্থানীয় বিডিও অফিসে জমা করতে পারেন। এই বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া আছে।
৭) আপনার সন্তানকে অবশ্যই একটি স্থানীয় সর্বশিক্ষা স্কুলে ভর্তি রাখুন, এবং সেখানে অন্তত মাসে 4 থেকে 10 দিন হাজিরা নিশ্চিত করুন। সর্বশিক্ষা থেকে প্রতিবছর সকলকেই ২৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া হয় এবং কন্যাশ্রী প্রকল্পে আলাদা টাকা দেওয়া হয়।
৮) যে সকল পিতা-মাতারা ইনকাম ট্যাক্সের ছাড় চান, তারা 10 (1) ধারায় স্থানীয় মেডিকেল অফিসারের কাছ থেকে একটি সার্টিফিকেট বার করে নেবেন। অনেক ক্ষেত্রে আবার শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী শংসাপত্র জমা দিলেই 75 হাজার টাকা আয়করে ছাড় পাওয়া যায়, প্রতিবন্ধী শতকরা আশির বেশি হলে 1 লক্ষ 25 হাজার টাকা ছাড় পাওয়া যায়।
৯) যাদের বয়স 18 পেরিয়ে গিয়েছে তাদের ন্যাশনাল ট্রাস্ট পদার্থ লিগাল গার্ডিয়ানশিপ সার্টিফিকেট করাটা জরুরি। এর জন্য সন্তানের আধার কার্ড, জন্ম শংসাপত্র, যিনি গার্জিয়ানশিপ নিচ্ছেন তার ডিক্লারেশন, যিনি গার্ডিয়ানশিপ নিচ্ছেন তার সঙ্গে বিশেষ মানুষটির ছবি, এবং আপনাকে চেনেন এমন দুইজন ব্যক্তির আধার নম্বর এবং ফোন নম্বর প্রয়োজনীয়। স্থানীয় ডিএম অফিস বা রেজিস্টার অর্গানাইজেশান অফিসে গার্ডিয়ান দরখাস্ত করা যায়।

সবশেষে বলি, হতাশ হবেন না। অনেক কাজ করবার আছে।

Comments

Popular posts from this blog

Is autism spectrum disorder manageable through therapies, see the hopes

জিনবৈকল্যে বিষক্রিয়া (স্টেমসেল - দ্বিতীয় পর্ব)

শেষ কোথায়?