Posts

Showing posts from December, 2018

ওরা - আমরা

একটি ভিক্টরি স্ট্যান্ড। সামনে সার সার দিয়ে রাখা চেয়ার। চল্লিশতম সারির গা দিয়ে উঠে গেছে বড় একটা পাঁচিল। এপার ওপার দেখা যায় না। একচল্লিশতম সারির আসনগ্রহণকারীরা চাইলেও উনচল্লিশের সারিতে আসতে পারবেন না। তারপর আরো ষাটটি সারি। ঘোষক ঘোষণা করলেন, আমরা প্রথম সারি থেকে দশ জনকে বেছে নেব। "পৃথিবীর সব ভালো" এই দশজন ই পাবে। পৃথিবীর সব সুযোগ-সুবিধা শুধুমাত্র এরাই পাবে। অর্থ-বল-প্রতিপত্তি-ক্ষমতা শুধু এদের কাছেই থাকবে। এরা আকাশ ছুঁতে পাবে। দ্বিতীয় থেকে উনচল্লিশের সারিতে বসা সকলে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। "না পাওয়ার ব্যর্থতা" থেকে সামান্য রক্তারক্তি ও হল। পাঁচিলের ওপারে ঘোষকের ঘোষণা পৌঁছালো না। ভিকট্রি স্ট্যান্ড ও দেখা গেল না। শেষ ষাটটি সারিতে বসা "ওরা-আমাদের" মত নয়। কাগজে-কলমে প্রতিবন্ধী। কেউবা আবার বলল benchmark disability. একজন কোনমতে একচল্লিশ থেকে উনচল্লিশের সারিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, প্রানপনে। ধাক্কাধাক্কিতে আরো হারিয়ে গেল। পাঁচিলের ওপারে প্রথম কয়েকটি সারির সকলে তর্ক জুড়লো। পিছন দিকে তাকিয়ে। সামনে তো পাচিল। আমরা high functioning. আমরা

অটিজমের অল্পবিদ্যা

কর্মজীবনের মধ্য লগ্নে পশ্চিমবঙ্গের আরো পশ্চিমে বীরভূম জেলার খয়রাশোল ব্লকে আধিকারিক এর ভূমিকাতে থাকাকালীন আমার নজর ছিল অটিজমের গ্রাম্য রূপটি দেখার। রুপুশপুর বা লোকপুর- বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের ই নিকটবর্তী শহর, হয় সিউড়ি অথবা রানিগঞ্জ। কোন আত্মীয়র বাড়িতে রাত্রিবাস করার সুযোগ না থাকলে যাওয়ার সাহস করা যায় না। এক-দেড়শ মানুষের বসবাস ছোট ছোট গ্রাম গুলোতে ফেলে রাখা ডাঙ্গা জমিই বেশি। মাইল এর পর মাইল, যত দূরে চোখ যায়। নতুন বিদ্যুতের খুঁটি আমাকে গর্বের সঙ্গে দেখানো হতো। অফিস সুলভ দাম্ভিকতার খোলস ছেড়ে শাল-পলাশ-মহুয়ার জঙ্গল পেরিয়ে "নিজ গৃহ নিজ ভূমি" তদন্তের সময় আমার নজর ছিল প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর দিকে। জেনেশুনেই "প্রতিবন্ধী" শব্দটা ব্যবহার করেছিলাম পলিটিক্যাল পার্টির লোক বা সহকর্মীদের বোধগম্য করবার জন্য। "গ্রামে গ্রামে বার্তা রটে গেল" আধিকারিক বাড়িতে প্রতিবন্ধী থাকলেই খাতায় নাম তুলছেন। আমার নজর কিন্তু অটিজমের দিকেই। দ্বীপের মতো ছোট ছোট গ্রামগুলোতে অটিজম নামক "না বোঝা শব্দ" টা উচ্চারণ পর্যন্ত করতে পারিনি। শেখার ছিল - গোষ্ঠীবদ্ধ থাকতে গেলে &quo

ব্যতিক্রমই বিবর্তন

নার্সিংহোম এর বাইরে দাঁড়িয়ে সদ্যোজাত সন্তানের পিতার চিন্তাভাবনায় আর যাই থাক না কেন, অটিজম থাকে না। থাকলে হয়তো নতুন পিতা মাতা সন্তানের প্রথম বছর অটিজম এর প্রেক্ষাপটেই পরিকল্পনা করতেন। আজ ভাবার সময় এসেছে। পৃথিবীর কোন কোনে ঠিক এই মুহুর্তে হয়তো কোন অটিজম বাচ্চার জন্ম হচ্ছে। কোন "পাপ" নয়, কোন "বিপদ" নয়। শুধু আপনাকে ব্যতিক্রমী হতে হবে। "সচেতনতার দেখনদারি গম্ভীরত্ব" এপ্রিলের দুই তারিখ পেরোলেই "ওরা-আমরা"  পাঁচিল তুলে দেয়। যখন মুখোশ খুলে পড়ে তখন অটিজম ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা একাকার হয়ে যায়। বিপদটা সেখানেই। জন্মাবধি মানসিক প্রতিবন্ধকতাকে হয়তোবা মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা যায়, কিন্তু অটিজমকে সম্ভব নয়। কারণ মূলস্রোতটি আজও পঙ্কিল। স্কুল-অনুষ্ঠান বাড়ি-শপিং মল যেখানে শব্দ-বর্ণ-আলো-গন্ধের ব্যবহার অনিয়ন্ত্রিত, অটিজম সুলভ নয়, তার সাথে জোর করে মিশ খাওয়ানো, দুই পক্ষকেই বিপন্ন করে তোলে। এখানেই ব্যতিক্রম এর প্রয়োজন আছে। গতানুগতিকতাকে আমার জীবনে copy paste করতে হবে, বাবা মা এর শান্তির জন্য morning shows the day এর শর্ত মানতে হবে-এর ব্যতিক